পটভুমি
দেশের উন্নয়নের জন্য অন্যতম প্রধান শর্ত হলো সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা। সঠিক পরিকল্পনার জন্য প্রয়োজন সময়োপযোগী সঠিক পরিসংখ্যান। পরিসংখ্যান যত নির্ভুল হবে নীতি নির্ধারকদের জন্য পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ তত সহজতর হবে। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা সংগ্রামের পর বাংলাদেশে সঠিক পরিকল্পনা প্রণয়ন, উন্নয়ন ও অগ্রগতি পর্যবেক্ষণে পরিসংখ্যানের গুরুত্ব উপলব্ধি করে বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুদুরপ্রসারী চিন্তাধারার ফলশ্রুতিতে ও তাঁর দিক-নির্দেশনায় ১৯৭৪ সালে আগষ্ট মাসে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা ৪টি পরিসংখ্যান অফিস (পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিসংখ্যান ব্যুরো, কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন কৃষি পরিসংখ্যান ব্যুরো ও কৃষি শুমারি কমিশন এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন আদমশুমারি কমিশন)-কে একীভূত করে সৃষ্টি করা হয় বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো। দেশের উন্নয়নমূলক পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং প্রশাসনিক কর্মকান্ডের জন্য নির্ভরযোগ্য ও সাম্প্রতিক তথ্য সরবরাহ করা পরিসংখ্যান ব্যুরোর দায়িত্ব। এছাড়া জাতীয় এবং স্থানীয় পরিকল্পনা প্রণয়নে নিয়োজিত পরিকল্পনাবিদ, সরকারি ও বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ, সংকলন ও প্রকাশের দায়িত্ব বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো নিয়মিতভাবে পালন করে আসছে। অন্যদিকে পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ জাতীয় পরিসংখ্যান বিষয়ক সকল নীতি নির্ধারণ করে এবং বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো নীতিমালা বাস্তবায়নের নিমিত্ত প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করে থাকে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো’র উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম/কার্যাবলীঃ
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোতে সুদীর্ঘকালের কর্মকান্ডে যে গতানুগতিক ভাবধারা বজায় ছিল, বিগত ৩ বছরে এর কাঠামোগত ও কর্মপদ্ধতিতে পরিবর্তন আনার ফলে এতে নতুন গতি সঞ্চার হয়। ফলশ্রুতিতে অত্র প্রতিষ্ঠানটির বিশ্বায়নের অগ্রযাত্রার সাথে দ্রুত তাল মেলানো সহজ হয়েছে। কেননা সময়ের চাহিদা অনুযায়ী বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর কার্যাবলীর রূপরেখা নতুন করে সাজানো হয়েছে। বিবিএস এর মূল কার্যক্রম হলোঃ
০১) যে কোন বিষয়ে মান সম্পন্ন ও সময়োপযোগী পরিসংখ্যান সংগ্রহ, সংকলন, সম্পাদন, বিশ্লেষণ, সংরক্ষণ এবং প্রকাশকরণ;
০২) সরকারী পর্যায়ে উন্নয়ন পরিকল্পনাবিদ,নীতি-নির্ধারক, গবেষণা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, জাতীয় ও আন্তজার্তিক সংস্থা ও অন্যান্য ব্যবহারকারীগণের চাহিদা অনুসারে দ্রুততার সাথে মানসম্পন্ন এবং ব্যবহার বান্ধব পরিসংখ্যান সরবরাহকরণ;
০৩) পরিসংখ্যান প্রণয়ন কার্যক্রমকে পরিকল্পনা প্রণয়নের মূল ধারার সাথে একীভূত করা এবং জাতীয় পরিসংখ্যান কৌশলপত্র (NSDS) প্রবর্তন করে জাতীয় পরিসংখ্যান পদ্ধতির উন্নয়ন;
০৪) অন্যান্য সরকারী এবং বেসরকারী দপ্তর হতে প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি পরিসংখ্যান সংগ্রহ, প্রক্রিয়াকরণ ও প্রকাশের ক্ষেত্রে সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণ;
০৫) প্রশিক্ষণ একাডেমি স্থাপন এবং পরিসংখ্যান বিষয়ে দক্ষ জনশক্তি তৈরি, সরবরাহ ও এর উন্নয়ন নিশ্চিতকরণ;
০৬) জাতীয় উন্নয়ন কর্মসূচিতে পরিসংখ্যানের ভূমিকা ও কার্যক্রমের ভূমিকা সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধিকরণ;
০৭) পরিসংখ্যান কার্যক্রম অনুষ্ঠানে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার আধুনিকীকরণ;
০৮) বিবিএস কর্তৃক প্রণীত জিও কোড সিস্টেম একমাত্র সরকারী জিও কোড সিস্টেম হিসাবে হালনাগাদ ও সংরক্ষণ এবং অন্যান্য সকল সরকারী সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানকে বভ্রবহারের জন্য উদ্বুদ্ধকরণ;
০৯) জাতীয় পপুলেশন রেজিস্টার প্রণয়ন ও সাম্প্রতিকরণ;
১০) সমন্বিত সেন্ট্রাল জিআইএস প্রণয়ন;
১১) বিকল্পসহ জাতীয় তথ্য ভান্ডার প্রণয়ন ও ডিজিটাল আর্কাইভে সংরক্ষণ;
১২) (ছয়)টি প্রধান এবং ১১৮টি অপ্রধান ফসলের উৎপাদন ও ফসলাধীন জমির পরিমাণ এবংভূমি ব্যবহার, সেচ সংক্রান্ত পরিসংখ্যান প্রস্তুত ও প্রকাশ;
১৩) বিভিন্ন প্রধান/অপ্রধান ফসলের উৎপাদন ও ফসলাধীন জমির পরিমাণ এবং ভূমি ব্যবহার, সেচ সংক্রান্ত পরিসংখ্যান প্রস্তুত ও প্রকাশ;
১৪) ০৬ (ছয়)টি প্রধান ফসলের পূর্বাভাস এবং ফসলের মূল্য ও উৎপাদন খরচ জরিপ সংক্রান্ত পরিসংখ্যান প্রস্তুত;
১৫) ক্ষয়ক্ষতিররিপোর্ট (চলতি মাসের প্রতিবেদনপরবর্তী মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে প্রেরণ)যেমনঃ বন্যা, ঝড়,জলোচ্ছ্বাস, অতিবৃষ্টি, খরা ইত্যাদি কারণে যে ক্ষয়ক্ষতিহয়, তার পরিসংখ্যান প্রস্তুত;
১৬) মৎস্য, বন, গবাদি পশু-পাখি/হাঁস-মুরগী সংক্রান্ত পরিসংখ্যান প্রস্তুত ও প্রকাশ;
১৭) মোট দেশজ উৎপাদন (GDP) এবং প্রবৃদ্ধির হারসহ অন্যান্য সামষ্টিক অর্থনৈতিক নির্দেশক (Indicators) যথা সঞ্চয়, বিনিয়োগ, ভোগ, মাথাপিছু আয় ইত্যাদি নিরূপণ ও প্রকাশ;
১৮) ভোক্তার দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় ব্যবহৃত খাদ্য ও খাদ্য বহির্ভূত পণ্য অন্তর্ভূক্ত করে মাসভিত্তিক ভোক্তা মূল্যসূচক (CPI) নিরূপণ ও প্রকাশ;
১৯) প্রতি দশ বৎসর অন্তর (১) আদম শুমারি (২) কৃষি শুমারি এবং (৩) অর্থনৈতিক শুমারি পরিচালনা ও প্রতিবেদন প্রকাশ;
২০) স্বাস্থ্য, শিক্ষা, শিশুপুষ্টি, মা এবং শিশুদের অবস্থা সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ, সংকলন ও প্রকাশ;
২১) মহিলাদের উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে তাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা নিরূপণের জন্য gender Statistics প্রস্তুত ও প্রকাশ;
২২) ভাইটাল স্ট্যাটিসটিক্স যেমনঃ জন্ম, মৃত্যু, বিবাহ, তালাক, আগমন, বর্হিগমন, জন্ম নিয়ন্ত্রন, প্রতিবন্ধী প্রভৃতির তথ্য সংগ্রহ, প্রস্তুত ও বাৎসরিক পরিসংখ্যান প্রকাশ;
২৩) দেশের বিভিন্ন প্রোয়াজনীয় তথ্যসম্বলিত মাসিক পরিসংখ্যান বুলেটিন,
২৪) বার্ষিক পরিসংখ্যান পকেটবুক, বর্ষগ্রন্থ, কৃষি বর্ষগ্রন্থ প্রকাশ;
২৫) মাসভিত্তিক ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্পের উৎপাদন সূচক প্রস্তুত ও প্রকাশ;
২৬) বৈদেশিক বাণিজ্য, পরিবেশ সংক্রান্ত পরিসংখ্যান প্রস্তুত ও প্রকাশ;
২৭) বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত শ্রমিকদের মজুরির হার ও মজুরি সূচক প্রস্তুত ও প্রকাশ এবং
২৮) খানার আয়ও ব্যয় নির্ধারণ জরিপ (HEIS) পরিচালনার মাধ্যমে দেশের দারিদ্র পরিস্থিতি সম্পর্কিত তথ্য প্রস্তুত ও প্রকাশ।
২৯) অন্যান্য কর্তৃপক্ষ, পরামর্শকারী প্রতিষ্ঠান, বেসরকারী সংস্থা, আন্তজার্তিক সংস্থা এবং ব্যক্তি বা ব্যক্তিসমূহের সাথে পরিসংখ্যান বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ, সংকলন, সম্পাদন ও প্রকাশনার নিমিত্ত প্রয়োজনীয় সমন্নয় ও সহযোগিতার জন্য যোগাযোগ স্থাপন;
৩০) পরিসংখ্যানের প্রধান প্রধান কার্যক্রমসমূহ আন্তজার্তিক মানে প্রমিতকরণ:
৩১) জাতীয় ও আন্তজার্তিক সংস্থার জন্য প্রণীত পরিসংখ্যানের মান সত্যকরণ:
৩২) পরিসংখান সংক্রান্ত পরামর্শ সেবা প্রদান এবং
৩৩) সরকার কর্তৃক নির্দেশিত অন্যান্য দায়িত্বপালন।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস