জনশুমারি ২০২২ এ প্রিলিমিনারি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।
ঢাকা: এবারের জনশুমারি ও গৃহগণনার আনুষ্ঠানিক পর্ব শুরু হয় গত ১৫ জুন। শেষ হওয়ার কথা ছিল ২১ জুন।
দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় তা শেষ হতে সময় নেয় ২৮ জুন পর্যন্ত।
বুধবার (২৭ জুলাই) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) এই জরিপের প্রাথমিক প্রতিবেদনের ফল প্রকাশ করা হয়।
প্রাপ্ত ফলাফলে জানা গেছে, বাংলাদেশের বর্তমান জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার ৫১৬ জন। এরমধ্যে পুরুষ ৮ কোটি ১৭ লাখ ১২ হাজার ৮২৪, নারী ৮ কোটি ৩৩ লাখ ৪৭ হাজার ২০৬ জন। হিজড়া জনগোষ্ঠীর মানুষ আছেন ১২৬২৯ জন।
এর মধ্যে সর্বোচ্চ জনসংখ্যা ঢাকা বিভাগে ৪ কোটি ৪২ লাখ ১৫ হাজার ১০৭ জন। সর্বনিম্ন জনসংখ্যা বরিশাল বিভাগে ৯১ লাখ ১০২ জন।
সর্বাধিক ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ৩৯৩৫৩ জন)। সর্বনিম্ন ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা রংপুর সিটি কর্পোরেশন (প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ৩৪৪৪ জন)।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রতি ১০০ জন নারীর বিপরীতে পুরুষের সংখ্যা ৯৮ জন। লিঙ্গানুপাতে সর্বোচ্চ ঢাকায় ১০৩.৪০ জন এবং সর্বনিম্ন চট্টগ্রামে (৯৩.৩৮) জন।
প্রতিবেদন বলছে, জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও বৃদ্ধির হার কমেছে। সর্বশেষ ২০১১ সালের জনশুমারি অনুযায়ী এই হার ছিল ১.৪৬ শতাংশ। ২০২২ সালের শুমারিতে যা রেকর্ড হারে কমে ১.২২ শতাংশে নেমে এসেছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার সর্বোচ্চ ছিল ঢাকা বিভাগে (১.৭৪ শতাংশ) এবং বরিশালে সর্বনিম্ন (০.৭৯ শতাংশ)।
তবে, দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমলেও বেড়েছে জনসংখ্যার ঘনত্ব। ২০১১ সালে যেখানে প্রতি বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে বসবাস ছিল ৯৭৬ জন, ২০২২ সালে সেটি বেড়ে উন্নীত হয়েছে ১১১৯ জনে। সবচেয়ে বেশি ঘনত্ব ঢাকা বিভাগে (২১৫৬ জন প্রতি বর্গ কিলোমিটারে) এবং সবচেয়ে কম বরিশাল বিভাগে (৬৮৮ জন প্রতি বর্গ কিলোমিটারে)।
প্রতিবেদন বলছে, দেশে অবিবাহিত জনসংখ্যা ২৮.৬৫ শতাংশ এবং ৬৫.২৬ শতাংশ লোক বিবাহিত। সবচেয়ে বেশি বিবাহিত রাজশাহী বিভাগে (৬৮.৯৭ শতাংশ) এবং সবচেয়ে কম সিলেট বিভাগে (৫৫.৫৯ শতাংশ)। অবিবাহিত হিসেব করা হয়েছে ১০ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সী জনসংখ্যার মানুষকে ধার্য করে।
জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২ অনুযায়ী, দেশের মোট জনসংখ্যার ৯১.০৪ শতাংশ মুসলিম, ৭.৯৫ শতাংশ হিন্দু, ০.৬১ শতাংশ, ০.৩০ শতাংশ খ্রিস্টান এবং ০.১২ শতাংশ অন্যান্য ধর্মাবলম্বী।
প্রতিবেদন বলছে, বর্তমানে দেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী জনসংখ্যা মোট জনসংখ্যার সর্বোচ্চ ১ শতাংশ। দেশে মোট জনসংখ্যার ২ কোটি ৩৬ লাখ ২ হাজার ৬০৪ জন (১.৪৩ শতাংশ) মানুষের কমপক্ষে ১ ধরনের প্রতিবন্ধিতা আছে। যার মধ্যে পুরুষ ১.৬৩ শতাংশ, নারী ১.২৩ শতাংশ। এই জরিপে সবচেয়ে বেশি প্রতিবন্ধী আছে খুলনা বিভাগে, সবচেয়ে কম ঢাকায়।
জরিপের ফলাফল অনুযায়ী, বাংলাদেশে মোট সাক্ষরতার হার ৭৪.৬৬ শতাংশ। এই হারের সর্বোচ্চ ঢাকায় (৭৮.৭৯ শতাংশ) এবং সর্বনিম্ন ময়মনসিংহ বিভাগে (৬৭.০৯ শতাংশ)৷
প্রাপ্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৫ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সীদের মধ্যে মোট ৫৫.৮৯ শতাংশ এবং ১৮ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সীদের মধ্যে ৭২.৩১ শতাংশ মানুষের নিজ ব্যবহারের মোবাইল ফোন রয়েছে।
অন্যদিকে, ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে উল্লিখিত বয়সসীমায় যথাক্রমে ৩০.৬৮ শতাংশ এবং ৩৭.০১ শতাংশ গত তিনমাসে ইন্টারনেট ব্যবহার করেছে।
এছাড়া, দেশের সর্বমোট বাসগৃহের সংখ্যা ৩ কোটি ৫৯ লাখ ৯০ হাজার ৯৫১টি। একইসঙ্গে ছিন্নমূল বা ভাসমান মানুষ আছেন ২২২১৯ জন।
প্রাথমিক প্রতিবেদনের ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
বক্তব্যে তিনি বলেন, দ্রুততম সময়ে এবারের শুমারি সম্পন্ন হওয়ায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে আমি অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আমরা বর্তমানে যে সময়ে বাস করছি, সেখানে মুহূর্তেই তথ্য ও উপাত্ত পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। ফলে, জনশুমারির ফলাফল আলোচনা ও পরামর্শের মাধ্যমে চুড়ান্ত করা হবে।
এর আগে তিনি জনশুমারি ও গৃহগণনা-২০২২ এর ফলাফল প্রতিবেদনের মোড়ক উন্মোচন করেন। সার্বিক তথ্য তুলে ধরেন এই প্রকল্প পরিচালক দিলদার হোসেন।
পরিকল্পনা মন্ত্রী এ কে এম আবদুল মান্নানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন। অনুষ্ঠানে পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭.৫০ ঘণ্টা, ২৭ জুলাই, ২০২২
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস